জুলাই ৭, ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
চলমান চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এক দফা দাবিতে নামিয়ে এনে ফের সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ নেতারা।
রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে টানা ৫ ঘণ্টা অবরোধের পর রাত ৮টায় শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচির শেষে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের বর্তমান এক দফা দাবি হল, সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
এ বিষয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ব্লকেড কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী কোটা সম্পর্কে কথা বলেছেন। আমরা সংবিধান দেখিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছি। সংবিধানে বলা হয়েছে, নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে। আমরা সংবিধানের পক্ষে লড়াই করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন। আমরা আশা করি এবারও তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিকে মেনে কোটা আন্দোলনের চূড়ান্ত সুরাহা করবেন।”
শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা হয় দাবি আদায় করে ছাড়বো নয়তো দেশ ছাড়বো। আমাদের কোনও দাবি যদি আপনাদের কাছে যৌক্তিক মনে না হয় তাহলে আমাদের একটি দাবি পূরণ করবেন। দেশে ১০০% কোটা নিশ্চিত করে দেবেন। যে প্রশাসন কোটাধারীদের প্রশাসন সে প্রশাসনে আমরা যেতে চাই না। হয়তো এই আন্দোলন থেকে কোটা প্রথা চূড়ান্ত নিরসন হবে নয়তো এই দেশকে কোটাধারীদের দেশ ঘোষণা করতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে। আগামীকালও সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন পয়েন্টে ব্লকেড কর্মসূচি চলবে। আজকে আমরা শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি আগামীকাল ফার্মগেট পার হয়ে যাবো।”
শিক্ষার্থীদেরকে সোমবার (৮ জুলাই) সাড়ে ৩টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্ম ঘোষিত সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মহাসড়কে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ৭ম দিনে রোববার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় এই অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও হল থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, চাঁনখারপুল মোড় অবরোধ করেন। ফলে ফার্মগেট-শাহবাগ, গুলিস্তান-নিউ মার্কেট, শাহবাগ-পল্টন-মগবাজার রোড, শাহবাগ -সাইন্সল্যাব রোড এবং শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে অ্যাম্বুলেন্সের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীরা জায়গা করে দেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা, একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’`- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে, রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে শনিবার (৬ জুলাই) অবরোধ তুলে নেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে অবরোধ প্রত্যাহারের আগে রোববার বেলা তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিসহ মোট ৪ দফা দাবিতে কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কোটা আন্দোলন ২০২৪: চার দফা দাবি
এর আগে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালসহ চার দফার দাবিতে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার বেলা আড়াইটা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব হলের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে হলপাড়া-ভিসি চত্বর-টিএসসি- বুয়েট, ইডেন কলেজ হয়ে বেলা পৌনে পাঁচটার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।